1. admin@upokulbarta.news : admin :
  2. bangladesh@upokulbarta.news : যুগ্ম সম্পাদক : যুগ্ম সম্পাদক
  3. bholasadar@upokulbarta.news : বার্তা সম্পাদক : বার্তা সম্পাদক
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

পতিত জমিতে লতিরাজ কচু চাষে সবুজ বিপ্লব।

উপকূল বার্তা ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০২২
  • ৩৭৭ বার পঠিত

কৃষি প্রতিনিধিঃ

বাংলাদেশে কচুর বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে, কচু শাক, কচুর ডগা, কচুর মুখি, ও লতি সবজি হিসাবে খাওয়া হয়ে থাকে। কচুতে প্রচুর পরিমান লৌহ ও ভিটামিন থাকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে পানিকচুর চাষ হচ্ছে, এ থেকে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টন লতি পাওয়া যায়। দিন দিন লতির চাহিদা বেড়েই চলছে। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে লতিরাজ কচু চাষ পদ্ধতি জেনে উৎপাদন বাড়িয়ে চাহিদা পুরণ করা সম্ভব।

কচুর জাতঃ

বর্তমানে বাংলাদেশে লতিকচুর অনেক জাত থাকলেও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে নতুন জাত অবমুক্ত করা হয়েছে লতিরাজ কচু, এ লতি চাষ বেশ লাভজনক।

লতিরাজ কচুর বৈশিষ্টঃ

লতিরাজ কচুর লতি সবুজ, সামান্য চেপ্টা,ও লম্বায় ৯০-১০০ সেমি. হয়। এ কচুর পাতার সংযোগস্থলের ও বোঁটার রং বেগুনি। লতিরাজ কচুর জীবনকাল ১৮০-২১০ দিন। লতিরাজ কচু আমাদের দেশের সব অঞ্চলেই চাষ করা যায়।

জমি ও মাটি তৈরিঃ

পলি দো-আঁশ ও এটেল দো-আঁশ জৈব পদার্থসমৃদ্ধ মাটি লতিরাজ কচু চাষের জন্য উপযুক্ত। বেলে মাটি রস ধরে রাখতে পারে না তাই এ ধরনের মাটি লতি চাষের জন্য ভালো নয়। উঁচু থেকে মাঝারি নিচু যোকোন জমি। বৃষ্টির পানি জমেনা এবং প্রয়োজনে সহজেই পানি ধরে রাখা যায় এমন জমি।

পানিকচু থেকে কচুর লতি পাওয়া যায়। লতি উৎপাদনের জন্য পানিকচুর জমি ভেজা ও শুকনো উভয় ভাবেই প্রস্তুত করা যায়। ভেজা জমি তৈরি করার নিয়ম হলো-ধান রোপণের জমি যেভাবে তৈরি করা হয়ে থাকে সে ভাবে তৈরি করতে হয়। আর শুকনোভাবে জমি তৈরির জন্য চার থেকে পাঁচটি আড়াআড়িভাবে চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হয়।

লতি রোপণ সময়ঃ

আগাম লতি রোপনের জন্য কার্তিক( মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর) লাগাতে হয়। আর নাবী ফসলে জন্য মধ্য ফালগুন থেকে মধ্য বৈশাখ (মার্চ- এপ্রিল) মাসে লাগানো যায়।

বংশবিস্তারঃ

একটি পূর্ণবয়স্ক পানিকচুর গোড়া থেকে যে সকল ছোট ছোট চারা হয়ে থাকে সেগুলোকেই বীজ হিসেবে জমিতে লাগানে হয়।

চারা রোপণ পদ্ধতিঃ

পানি কচুর চারার বয়স কম হতে হয়। চারা চার থেকে ছয় পাতার হলে সবল ও সতেজ গুলো রোপণের জন্য নির্বাচন করতে হয়। জমিতে চারা রোপণের সময় উপরের দিকের দুই থেকে তিনটি পাতা রোখে বাকি পাতা গুলো ছাঁটাই করে দিতে হবে।

কোন চারা যদি গোড়ার দিকে বেশি লম্বা হয় তাহলে কিছু শিকড়সহ গোড়ার অংশবিশেষ ছাঁটাই করে দিতে হয়। কচুর সারি থেকে সারির দুরত্ব হবে ৬০ সেমি. এবং গাছ থেকে গাছ ৪৫ সেমি. দুরত্বে চারা রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের জন্য মাটির গভিরতা হবে ৫-৬ সেমি।

পরিচর্যাঃ

মুল জমিতে চারা রোপন করতে দেরি হলে পানিকচুর চারা ভেজা মাটি ও ছায়া যুক্ত স্থানে রেখেদিতেম হবে। জমিতে চারা রোপণের সময় চারা যাতে হেলে না পড়ে সে জন্য মাটি কাদা করার সময় বেশি নরম করা যাবেনা।

গাছ কিছুটা বড় হলে গোড়ার হলুদ পাতা বা শুকিয়ে যাওয়া পাতা ছাঁটাই করে দিতে হবে। ক্ষেতে কোন প্রকার আগাছা জন্মাতে দেওয়া যাবেনা সব সময় পরিস্কার রাখতে হবে।

পানি কচুর গাছে লতি আসার সময় ক্ষেতে পানি জমতে দেওয়া যাবেনা।আবার একেবার শুকনো রাখা যাবেনা শুকনো রাখলে লতি কম বের হয় বা দৈঘ্য কম হয়।

জমিতে সার প্রয়োগঃ

প্রতি শতকে এমওপি ৭৫০ গ্রাম, ইউরিয়া ৬০০গ্রাম, টিএসপি ৫০০গ্রাম, গোবর ৫০কেজি করে দিয়ে জমি তৈরির শেষ চাষের সময় ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

ইউরিয়া সার ২-৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হয়। প্রথম কিস্তির সার চারা রোপণের ২০-২৫ দিনের মধ্যে প্রয়োগ করা ভালো।

সার প্রয়োগের পর হালকা সেচ দিতে হবে। জমিতে কোন সময় দস্তা ও জিংকের অভাব থাকলে জিপসাম ও জিংক সালফেট সার ব্যবহার করতে হবে। জয়পুরহাট অঞ্চলের চাষিরা প্রতিবার লতি সংগ্রহের পর ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করে থাকেন।

পানি সেচ ও নিস্কাশনঃ

কচু একটি জলজ উদ্ভিদ হলেও দীর্ঘ সময় ধরে জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। বিষেশ করে লতি উৎপাদনের সময় জমিতে পানি ধরে রাখা উচিত নয়। জমিতে জো থাকলে লতি বেশি বের হয়।

কচুর রোগ ও ব্যবস্থাপনাঃ

কচুর সাধারনত কোন রোগ দেখা যায় না রোগের মধ্যে কচুর পাতার মড়ক রোগ হয়ে থাকে। পাতার উপরে বাদামি থেকে বেগুনি রংয়ের গোলাকার দাগ দেখা যায়। পরবর্তীতে এ সমস্ত দাগ আকারে বড় হয়ে একত্রিত হয়ে যায় এবং পাতা ঝলসে যায়। পরে এ দাগ কচু ও কন্দে বিস্তার লাভ করে।

পরপর ৩-৪ দিন বৃষ্টি থাকলে ও উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্ আবহাওয়ায় এ রোগের মাত্রা বেড়ে থাকে। রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে, ডাইথেন এম ৪৫ অথবা ২ গ্রাম নাজাহ মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ৩-৪ বার প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োগের আগে ট্রিকস মিশিয়ে নিতে হয়।

ফসল সংগ্রহঃ

লতি রোপণের ২ মাস পর থেকে ৭ মাস বয়স পর্যন্ত লতি সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের অনেক জেলাতেই লতিরাজ কচু চাষ করে বেকার সমস্যার সমাধান ও ভাগ্য পরিবর্তন করেছে । লতিরাজ কচু চাষ পদ্ধতি জেনে বুঝে করলে সফল হওয়া যাবে।

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা