প্রতিনিধি, ভোলাঃ
ভোলার ১ লাখ ৬৫ হাজার নিবন্ধীত জেলেসহ প্রায় দুই লাখ জেলেকে বছরের ১৪৮ দিন বেকার থাকতে হয়। এ সময় বেকার জেলেদের যদি পরিবারে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা থাকে, তাহলে সেই জেলে নদীতে- সাগরে চুরি করে মাছ ধরে না। এ কারণে জেলে ও জেলে বৌদের সংসারে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে মাছ শিকারের নিষিদ্ধ সময়ে বেসরকারি, সরকারি পর্যায়ে ঋণের কিস্তি সংগ্রহ বন্ধ রাখতে হবে।’
সুইজ ব্যুরোর অর্থায়নে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডোশন আয়োজিত কর্মশালায় জেলে বৌ এমন মন্তব্য করেন। ফাউন্ডেশনের নিজস্ব ভোলা সদর কার্যালয় মিলনায়তনে শনিবার সকাল ১১টায় সদর উপজেলার ধনিয়া ও ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৩০টি জেলে পরিবারের জেলে ও জেলেবৌরা তাঁদের সমস্যা ও সমাধানের কথা উল্লেখ করেছেন। এসএসএফ জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং- ‘গবার্নেন্স ইন ইকোসিস্টেম-বেসড কোস্টাল এন্ড ট্রাডিশনাল একোয়াকালচার ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন,প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ সোহেল মাহমুদ।
বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রিপন কুমার সাহা, জেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্যকন্যার কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিমউদ্দীন, জেলা মৎস্যজীবি লীগের সভাপতি হাসান খান, ভোলা জেলা ক্ষুদ্র ও মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম, সদর উপজেলা সভাপতি এরশাদ আলী, প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও কোস্ট ফাউন্ডেশনের টিমলিডার রাশিদা বেগম প্রমূখ।
জেলে বৌরা বলেন, একজন জেলে অনেকগুলো সংস্থার কাছে ঋণ নেন। গড়ে প্রতিদিন ঋণের কিস্তি দিতে হয়। এ টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে জেলেকে নিষেধাজ্ঞার সময়ে নদী সাগরে মাছ ধরতে যেতে বাধ্য হতে হয়। এ সময় ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখা দরকার।
জেলে পরিবারের সদস্যরা আরও বলেন, বেকার সময়ে জেলেদর রেশন কারডের মাধ্যমে চাল দেওয়া উচিত। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা দরকার। যাদের বিকল্প আয় আছে, তাদের ঋণ কম, ঋণের কিস্তি পরিশোধের ব্যবস্থা আছে। তাই তারা বেকার সময়ে নদীতে যায় না।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জেলেবৌদের উদ্দেশ্যে বলেন, যাই আয় করেন, কিছু না কিছু সঞ্চয় করবেন। সেটি নির্ধারিত সময়ের আগে খরচ করবেন না।
সোহেল মাহমুদের সঞ্চালনায় দল গঠনের মাধ্যমে ভোলায় নিম্ন লিখিত সমস্যাগুলো পাওয়া যায় ,
ভোলায় জেলে পরিবারের নিম্ন লিখিত সমস্যা সমাধান জরুরি-
সমস্যা সমূহঃ
০১ -জেলে পরিবারের নারীদের শিক্ষার হার কম.নারীদের শিক্ষার অভাবে সরকারি প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত ।
০২ -সরকারি-বেসরকারি ঋণের কিস্তি দিতে ইলিশ সংরক্ষনে অবরোধের সময়ে অসুবিধা হয়।
০৩- জেলে পরিবারের দরিদ্রতার কারনে ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা করাতে পারে না।
০৪- জেলেদের পুজিঁর অভাবে উন্নত পদ্ধতিতে মাছ চাষ,পশু পালন,কৃষি সহ ক্ষুদ্র ব্যবস্যা করতে পারে না।
০৫ -ইলিশ সংরক্ষণে অবরোধকালীন সময়ে সরকারি চাউলের সাথে নগদ অর্থ প্রয়োজন কারন চিকিৎসা, শিক্ষা, সংসার খরচ চালাতে কস্ট হয়।
০৬ -জেলেদের সাগরের সুরক্ষা সরঞ্জাম পর্যাপ্ত না থাকায় মৃত্যু ঝুকিঁ,নদীতে চর পরার কারনে জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে বাধাঁর সম্মুখীন হয়।
০৭- জেলে পরিবারের নারীদের কুটির শিল্প (নকশি কাঁথা, রশি, টুপি এবং পাঞ্জাবি ইত্যাদি মজুরী কম দেয়া হয়)
০৮- ভাসমান জেলে পরিবারের মৃত্যুর হার বেশি কারন তারা শিক্ষা, চিকিৎসা,স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত ।
০৯- ভাসমান জেলেদের নির্দিষ্ট কবর স্থান না থাকায় লাশ দাফনের সময়ে বিভিন্ন অসুবিধা হয়।
১০ -অবৈধ জাল ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধ্বংস হয়,তখন বৈধ জেলেরা নদী/সাগরে মাছ আহরণ করতে গেলে মাছ পায় না।
১১- জেলেরা নদীতে পলিথিন,প্লাষ্টিক ব্যবহারের কারনে মাছ উৎপাদন কম হয়,জেলেরা নদী/সাগরে মাছ পায়না।
১২- জেলেদের অনেকেরই এখনও জেলে কার্ড করা হয়নি, জেলেদের চিকিৎসা খরচ চালানো কষ্টকর।
১৩- জেলে পরিবারের নারীগন কোন কাজ করে না,জেলে পরিবার গুলোতে উপার্জনকারী ১ জন কিন্তু পরিবারের সদস্যে সংখ্যা প্রায়ই ৪/৬ জন।
১৪ জেলে পরিবারের নারীগন সমাজে অবহেলিত, জেলে পরিবার গুলোতে পুষ্টির অভাব, জেলে পরিবারের নারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কম।
১৫- নদীর পাড় এলাকায় সরকারি/ বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা কম, জেলেদের দরিদ্রতার কারনে উপযুক্ত মেয়েদের বিবাহ দিতে অসুবিধা হয়।