আমার কাছে, এখানে স্থায়িত্বশীলতা মানে বিদ্যমান মানব স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি ছাড়াই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জাতীয় সম্পদ যেমন পানি, বায়ু, বন, মাটি, জীববৈচিত্র্য ইত্যাদির গুণমান বজায় রাখা এবং পুনরুদ্ধার করা। এখানে আমি আমার স্বল্প সময়ের পর্যবেক্ষণ থেকে মালয়েশিয়ার একটি সেরা উদাহরণ অর্থাৎ সানওয়ে কোম্পানি সম্পর্কে বলতে চাই।
আমি যখন আমার সহকর্মীদের সাথে নব্য-উদার অর্থনীতির বিরুদ্ধে আমাদের প্রচারণার বিষয়ে কথা বলি, তখন আমি তাদের মনে করিয়ে দিই যে আমরা বাজার বা বেসরকারি খাতের বিরুদ্ধে নই, তবে তাদের(বাজার/বেসরকারি খাত)স্থায়িত্বশীলতার বিষয়ে আরও বেশি যত্নবান হতে হবে। বিশেষ করে রাষ্ট্রকে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবাগুলিতে অবশ্যই বিনিয়োগ করতে হবে, যেমন- শিক্ষা, পানি, বাসস্থান, খাদ্য, বিদ্যুৎ এবং যোগাযোগ ইত্যাদি খাতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ এর কথা বলছি, কেননা এগুলো একটি জাতি ও সমাজের সমতা বিনির্মানের জন্য মৌলিক। সংক্ষেপে এগুলোকে আমরা পাবলিক সেক্টর বলি। আমি অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবাগুলিতে ব্যক্তিগত বিনিয়োগের বিরুদ্ধে নই, তবে এই সমস্ত প্রয়োজনীয় খাতে সরকারী/রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের প্রাধান্য থাকা উচিত।
গত চার দিন ধরে আমি সানওয়ে ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার প্ল্যানেটারি হেলথ বিষয়ের উপর একটি কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করছি। সংক্ষেপে, যখন আমরা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কথা বলি তখন আমরা পরিবেশকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। কিন্তু গ্রহস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে আমাদের মানব স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত, যেমন, ঢাকার অতিরিক্ত বায়ু দূষণই নগরবাসীর ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রধান কারণ, এর অর্থ হল ছাদে গাছ লাগানো আবশ্যক, আমাদের অবশ্যই সমস্ত পুরানো যানবাহনগুলিকে অপসারন করতে হবে যা প্রচুর পরিমাণে কালো ধোঁয়া নির্গত করে, আমাদের অবশ্যই সমস্ত নির্মাণ কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যা থেকে সমস্ত ধরণের ধুলো/কণা ইত্যাদি তৈরি হয়। কক্সবাজারে ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি। শুটকি মাছে কীটনাশক ব্যবহার অবশ্যই একটি অন্যতম কারণ হতে পারে কারণ আমরা কক্সবাজারবাসীরা প্রায়ই শুটকি মাছের তরকারি খাই।
১৬ই এপ্রিল রাতের খাবারের সময়, আমি সানওয়ে গ্রুপ অফ কোম্পানির মালিক ড. জেফরি চেয়ে-এর বক্তব্য শুনেছি, তিনি তার ব্যবসার মধ্যে স্থায়িত্বশীলতা এবং লাভের মধ্যে ভারসাম্য অর্জনে কীভাবে সফল হয়েছেন তা খুব ভালভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি ৪০০ একর পরিত্যাক্ত জমিতে সানওয়ে সিটি প্রতিষ্ঠা করেন যা আগে খনির কাজে ব্যবহৃত হত। এখন সেখানে লেক, বাসস্থান, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন প্ল্যান্ট, হোটেল, বিশ্ববিদ্যালয়, শপিং মলসহ স্কাই ট্রেনও রয়েছে সেই সাথে সেখানে প্রকৃতির পুনরুদ্ধারের জন্য রয়েছে প্রচুর গাছপালা।
ডক্টর জেফ্রির ফাউন্ডেশন, স্কলারশিপ এবং জাতিসংঘের তহবিলে বিলিয়ন ডলারের অবদান রাখে। তাদের রয়েছে প্রায় ১১ হাজার কর্মী, তার মধ্যে বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্য প্রায় ১ হাজারের কম নয়। তার সানওয়ে ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার এক নম্বর প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি, গতকাল আমার ফেইসবুকের একটি পোস্টে বলেছিলাম, সেখানে অন্তত তিনজন বিশ্ববিখ্যাত বাংলাদেশি বিজ্ঞানী বর্তমানে শিক্ষকতা করছেন। আমি ডঃ জেফ্রির বক্তব্য দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছি, অর্থাৎ, “আমার নি:শ্বেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি আপনাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করে যেতে চাই” এবং অবশ্যই তা একটি টেকসই গ্রহের জন্য।
রেজাউল করিম চৌধুরী, কুয়ালালামপুর, ১৯ এপ্রিল ২০২৪