1. admin@upokulbarta.news : admin :
  2. bangladesh@upokulbarta.news : যুগ্ম সম্পাদক : যুগ্ম সম্পাদক
  3. bholasadar@upokulbarta.news : বার্তা সম্পাদক : বার্তা সম্পাদক
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩০ অপরাহ্ন

মানব ও প্রাণিদেহে অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের (এ এম আর) ভূমিকা

কৃষিবিদ ডক্টর এস এম রাজিউর রহমানঃ
  • আপডেট সময় : শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৪৭৫ বার পঠিত

World Health Organization celebrates annually the World Antimicrobial Awareness Week (18 to 24 November WAAW). The WAAW aims to increase awareness of global antimicrobial resistance and to encourage best practices among the general public, health workers and policy makers to avoid the further emergence and spread of drug-resistant infections.

১৯২৮ সালের পূর্বে মানুষ ও পশুপাখিতে সংক্রমণ রোগ ছিল অপ্রতিরোধ্য। এ বছর (১৯২৮) স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং পেনিসিলিন আবিষ্কারের পর জীবাণু সংক্রমণ চিকিৎসায় ঘটে যায় বিল্পব। কিন্তু এন্টিবায়োটিকের অযাচিত ব্যবহারে ঘটে বিপত্তি। পশুপাখি, মানুষ আমরা সবাই একই পরিবেশ বাস করি এবং মাটি ও পানি ব্যবহার করছি। কাজেই যেকোনো একটিতে অযাচিত এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার মানব স্বাস্থ্যের হুমকির কারণ হয় । স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ১৯৪৫ সালে নোবেল পুরস্কার অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, এন্টিবায়োটিকের যেমন রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে তেমনি ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম।তাই তিনি বিশ্ববাসীকে সে সময়েই এন্টিবায়োটিকের ব্যবহারে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। অ্যান্টিবায়োটিক হচ্ছে কয়েক ধরনের জৈব রাসায়নিক ওষুধ, যা অণুজীবদের ধ্বংস করে। বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক বিভিন্ন অণুজীবের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে কাজ করে। কিছু ব্যাকটেরিয়া কিছু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ করতে পারে। আবার অন্যদিকে ওই একই অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা অন্য কিছু ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয় এবং প্রয়োগকৃত ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, ফলে রোগ-বালাই ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষের মৃত্যু ঘটে। সারা বিশ্বের মানুষই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠার ঝুঁকিতে রয়েছে। এই অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়াকে বলে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এ এম আর)। এর ফলে কোনো ওষুধই এদের বিরুদ্ধে আর কাজ করতে পারে না। এই ক্ষমতাকে ‘সুপারবাগ’ বলা হয়।

প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী সাত লাখ মানুষ মারা যায় এই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের কারণে। ধারণা করা হয়, ২০৫০ সালের মধ্যে এটি প্রায় ১ কোটিতে পৌঁছে যাবে। ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে ৮০ শতাংশ রোগীর মৃত্যুর কারণ এই সুপারবাগ।তাই আগামী দিনের মহাসংকটের জন্যে এখনই প্র¯তুতি নিতে হবে । মানুষের সঙ্গে-সঙ্গে প্রাণীর ক্ষেত্রেও এন্টিবায়োটিক ব্যবহার হয, যা কখনোই পুরোপুরি বিলীন হয় না, মাটিতে রয়ে যায়। ফলে আমরা যা খাই, যেমন সবজি, ফল বা মাছ,মাংস ইত্যাদির মধ্যে থেকে এন্টিবায়োটিক আমাদের শরীরে চলে আসে এবং এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রতিদিন যেসব খাবার খাচ্ছি তার অনেকগুলো থেকেই এন্টিবায়োটিক শরীরে প্রবেশ করতে পারে। যেমন: মুরগীর মাংস ; গরু বা খাসীর মাংস; দুধ এবং দুগ্ধ জাতীয খাবার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস এ গেব্রেয়াসুস বলেছেন যে এসময়ের সবচেয়ে বৃহত্তম স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হল অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স/’সুপারবাগ।এর জন্য মানুষের খাদ্যাভ্যাসও অনেকাংশে দায়ী ।

কোনো প্রাণী যদি নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধে প্রতিরোধী হয়ে থাকে, তাহলে সেই প্রাণীর প্রোটিন খেয়ে মানুষেরও একই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বে যে পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি হয় তার অর্ধেকই ব্যবহার করা হয় পশু উৎপাদনে। বিশ্বব্যাপী পশুখাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করার জন্য ব্যাপক তোড়জোর শুরু হয়। ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সুইডেন পশুর খাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দেয়। পরবর্তীকালে ডেনমার্ক (১৯৯১), নিউজিল্যান্ড (১৯৯৯), চিলি (২০০৬), ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (২০০৬), নেদারল্যান্ডস, কোরিয়া (২০১১), যুক্তরাষ্ট্র (২০১৭), সর্বশেষচীন (২০২০) এটি নিষিদ্ধ করে দেয়। বাংলাদেশও এটি ২০১০ সালে নিষিদ্ধ করে দেয়।

বিভিন্ন কারণে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টান্ট হযে থাকেঃ
 ডাক্তারের পরামর্শ ছাডা বিনা প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা। বাংলাদেশে বহু মানুষ বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষ চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ফার্মেসীতে গিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে সেবন করে।
 পুরো কোর্স শেষ না করে মাঝপথে অ্যান্টিবায়োটিক খাওযা বন্ধ করলে।
 প্রয়োজনের তুলনায স্বল্প ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে।
 ভাইরাসজনিত কোন অসুখে, অর্থাৎ যেসব ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে এমনি সেরে যেত, সে ক্ষেত্রেও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে ।
 প্রাণিসম্পদে এন্টিবাযোটিক ব্যবহার বন্ধ হলেও কিছু অসাধু খামারি অধিক লাভের আশায় এন্টিবায়োটিক ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে।
 এন্টিবায়োটিক আমদানি কিংবা উৎপাদনে জবাবদিহিতার দুর্বলতা।

উত্তরণের উপায়ঃ প্রাণিজ সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাসে করণীয় ঠিক করার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় , মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর অ্যানিম্যাল হেলথ (ওআইই) সকল পক্ষের প্রতিনিধির মাধ্যমে একটি সাধারণ প্লাটফর্ম তৈরি করা হযেছে, যা ওয়ান হেলথ’ প্লাটফর্ম নামে পরিচিত । এই ওয়ান হেলথ কার্যক্রমের আওতায় ২০১১-১২ সালে চার বছর মেয়াদি একটি কৌশলপত্র প্রস্তত করেছিল । প্রায় এক দশক ধরে সমন্বিতভাবে কাজ করার মাধ্যমে বিগত ২০২০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর অ্যানিম্যাল হেলথ (ওআইই) মিলিতভাবে ‘ওয়ান হেলথ গেøাবাল লিডারস গ্রুপ অন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’ নামে একটি ইভেন্টের সূচনা হয়, যার কো-চেয়ার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবং মানুষের রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধির জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের গুরুত্ব দেয়া হয় ।
অনেকগুলো এন্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে যাওয়ায় রিজার্ভড এন্টিবায়োটিকগুলো ব্যবহার হচ্ছে।তাই আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নতুন কোন কার্যকর এন্টিবায়োটিক উদ্ভাবন করা না গেলে সংকট ঘনীভূত হবে। তাই জীবন রক্ষাকারী রিজার্ভড এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।ডাক্তারের সুপারিশপত্র ছাডা অ্যান্টিবায়োটিক ক্রয বিক্রয় বন্ধ করতে হবে।

গুড হাজবেন্ড্রী প্রাকটিসের মাধ্যমে এন্টিবায়োটিকমুক্ত ডিম ও মাংস উৎপাদনে করতে হবে। এজন্য খামারে জীবনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, খামার ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে।
সকল ধরনের ডেইরি ও পোল্ট্রি খামারকে নিবন্ধিত করতে হবে। ডাটাবেজ তৈরী করে মনিটরিংয়ের আওতায় রাখতে হবে। এর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের ভয়াবহতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমেও পশুর খাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধ করা যেতে পারে। এসব এলাকার জনপ্রতিনিধিগণ প্রাণিসম্পদ সেবাদানকারী, অগ্রজ কৃষকদের নিয়ে সচেতনতা মূলক কর্মকান্ড সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়াও প্রাণিদেহ থেকে যেসব রোগ মানবদেহে সংক্রমিত হয়, সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে , আমরা যারা এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছি, তাদের সচেতন হলেই হবে না। ভোক্তাসাধারণকেও সচেতন করে তুলতে হবে।

কৃষির উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গবাদি পশুপাখির গুড হাজবেন্ড্রী প্রাকটিস,রোগবালাই প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ, এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বিষয়ক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে।
দেশে খামারি পর্যায়ে উৎপাদিত মৎস্য ও পশুখাদ্যে প্রোবায়োটিক, প্রিবায়োটিক এবং এন্টিবায়োটিক-অলটারনেটিভ ফিড এডিটিভস-এর ব্যবহার উৎসাহিত করতে হবে। এভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রদর্শনী খামার তৈরি করে খামারীকে বোঝাতে হবে যে,অ্যান্টিবায়োটিক ছাডাও গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি লালন পালন করা যায়।

বিশেষজ্ঞের মতে, প্রাণিজ মাংস খাওয়ার ১৫ দিন আগ পর্যন্ত সেই প্রাণীর দেহে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ না করলে সেটি আর মানবদেহে প্রবেশ করতে পারবে না। তাই প্রাণী বাজারজাতের ১৫ দিনের মধ্যে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ অনুচিত।এর ব্যত্যয় ঘটলে এন্টিবায়োটিক রেসিডুয়াল ইফেক্ট মানবদেহে চলে আসবে। যা মানবদেহের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে।
সুস্থ-সবল জাতি গড়তে চাই,অ্যান্টিবায়োটিক ফ্রী নিরাপদ খাদ্য। যা সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। সরকার, বেসরকারি উদ্যোক্তা, উন্নয়ন সহযোগীসহ সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

লেখকঃ

কৃষিবিদ ডক্টর এস. এম. রাজিউর রহমান, সাবেক জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়কারী/উপদেষ্টা, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO of  UN)ই-মেইলঃ  smrajiurrahman@yahoo.com

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা