1. admin@upokulbarta.news : admin :
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আর, এম. ও ডা: আশরাফুল আমিনের ব্যবহারে অতিষ্ঠ রুগী ও স্বজন ছবি তোলার অপরাধে সাংবাদিক গ্রেফতার, অত:পর মুক্তি সাতক্ষীরায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তবায়নে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশলা ভোলার ৩ উপজেলায় ৩৮ জনের মনোনয়নপত্র দাখিল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ভোলার গ্যাস ভিত্তিক ৩৪.৫ মেগাওয়াটের পাওয়ার প্লান্ট- তীব্র লোডশেডিং এ ২ লাখ গ্রাহক প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে ফকিরহাটের ফুটবল রেফারির পুরস্কার গ্রহণ সাতক্ষীরা টাউন হাইস্কুল গণহত্যা দিবসের কর্মসূচিতে বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও শহীদ স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জোর দাবি সময় টিভির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ভোলায় আলোকিত মানুষের মিলন মেলা তজুমদ্দিনে চরফ্যাসনের কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৩ পদে ১০ জনের মনোনয়ন দাখিল

সমাজে আমরা সবাই সমান-রেজাউল করিম চৌধুরী

রেজাউল করিম চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ফাউন্ডেশন।।
  • আপডেট সময় : শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩
  • ৪২৭ বার পঠিত

রেজাউল করিম চৌধুরী,কোস্ট ফাউন্ডেশনঃ

সময়টা সম্ভবত ১৯৯৯ সাল, আমি তখন দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশনে কাজ করি, সেখানে তখন আসেন সেই সময় বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব রবার্ট চেম্বারস, যিনি তার “পুটিং পিপল ফার্স্ট” বই লিখে নোবেল পুরস্কারের জন্যও মনোনীত হয়েছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক এনজিও অ্যাকশন এইড-এর বোর্ড সদস্য ছিলেন। সেই অ্যাকশন এইড-এর ভোলা প্রকল্পটির স্খানীয়করণ নিশ্চিত করতে বা প্রকল্পটিকে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার অঙ্গিকার নিয়ে চরফ্যাশনে কাজ করছিলাম। প্রকল্পটিকে আমরা ইতিমধ্যেই কোস্ট ফাউন্ডেশনেরূপান্তরিত করেছি।
রবার্ট চেম্বার চরফ্যাশনে আমাদের সাথে দেখা করেন, আমাদের ক্যাম্পাসে দুই রাত তিনি অবস্থানও করেন। আমাদের অফিস এবং কার্যক্রম পরিদর্শনের পর তিনি আমাকে হাতে লেখা একটি চিঠি লিখেছিলেন, সেখানে আমাদের একটি বিশেষ মূল্যবোধের প্রশংসা করেছিলেন। সেই মূল্যবোধটা ছিলো- বেতন এবং অবস্থানের ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকলেও, সমাজে সম্মান দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সবাই সমান। আমাদের সংস্থার এই মূল্যবোধগুলি খুব অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে। কোস্ট ফাউন্ডেশনের সকল কর্মীর যাতায়াত ভাতা সমান, একজনসর্বোচ্চ পদের কর্মী যাতায়াতে দৈনিক যে ভাতা পান, একই ভাতা পান অফিসের সেবা কর্মীও।
আমার পরিবারে আমরা এই মূল্যবোধ বেশ কঠিনভাবে ধারণ করি, কারণ আমি আমার বাবাকে সবার সাথে সমান আচরণ করতে দেখেছি। আমি আমার এক চাচাতো ভাইয়ের কাছেও এই মূল্যবোধ শিখেছি, তিনি রাজনীতিতে আমার বাবাকে অনুসরণ করতেন, আমি তাঁর কাছ থেকে বাম রাজনীতি শিখেছি, বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্রের উপর প্রচুর বই তাঁর কাছ থেকে নিয়ে পড়েছি। তার ছেলে এখন একজন সরকারি চিকিৎসক এবং তার মেয়ে একজন আইনজীবী।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবাই নিশ্চয়ই দেখেছেন যে, বগুড়ায় কিভাবে শিশুরা একজন সরকারি কর্মচারির আচরণের প্রতিবাদ করেছে। একজন ছাত্রী সেখানে বলেছে, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমরা সবাই সমান, এখানে কোনও ভেদাভেদ নেই। কথাটা শুনে আমার খুব ভালো লেগেছে, আমি বেশ আশান্বিতও হলাম। আমি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও এ ধরনের মূল্যবোধ চর্চা করতে দেখেছি। শেরাটন হোটেলে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠান শুরুতে সেখানে বিভিন্ন স্টল তাঁর পরিদর্শন করার কথা ছিলো। কিন্তু সেই পরিদর্শন শেষ মুহূর্তে বাতিল হলেও, তিনি আমাদের কমিউনিটি রেডিওর স্টলে এলেন। আমি তাঁকে স্যার বলে সম্বোধন করতেই তিনি আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন, আমি ভাবলাম সম্ভবত কোনও ভুল হয়ে গেছে আমার। তিনি আমার দিকে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, স্যার নয়, আমাকে আপা ডাকবেন। তিনি জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনসহ সেখানে প্রায় ৫ মিনিট ছিলেন, আমি তাঁকে কমিউনিটি রেডিও আন্দোলন সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করলাম। আমার সঙ্গে সেখানে ছিলেন বরিশালের আভাস এন জিও-র কাজল আপা এবং খুলনা থেকে এসোড এনজিওর শামীম ভাই। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ সবাই ব্যর্থ হলেও, আমরা সেদিন তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
সম্প্রতি আমাদের এক বন্ধু, একটি এনজিওর প্রধান নির্বাহী, পত্রিকায় একটি নিবন্ধ লিখেছেন, যার শিরোনাম, ‘আমরা আমাদের সংস্কৃতি পরিবর্তন করছি’। পরিবর্তনের এই বিষয়টি আমার খুব পছন্দ হয়েছে। অনেক বিষয়েই আমাদের পরিবর্তন দরকার।
আমি যখনই দেশে বা বিদেশে কোথাও ভ্রমণ করি, আমি কখনই আমার ব্যাগ অন্য কাউকে টানতে বা বহন করতে দেই না। গত ৪ মার্চ আমি জাতিসংঘের একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে কাতারের দোহায় ছিলাম। পাঁচ তারকা একটি হোটেলের একজন বেয়ারা আমার ব্যাগ নেওয়ার চেষ্টা করছিলো, আমি দিইনি। তাঁকে বলেছি, মানুষ হিসেবে আমরা সবাই সমান, তাছাড়া আমি শারীরিকভাবে এখনো যথেষ্ট সক্ষম,তাই আমিই আমার ব্যাগ নেব। তিনি খুব অবাক হলেন, বললেন, এই প্রথম এমন কথা কারো কাছ থেকে শুনলাম।
আমি দেখেছি, শুধু সরকারি নয়, আমাদের এনজিও সেক্টরেও অনেক কর্মকর্তা কেউ দরজা খুলে না দেওয়া আগ পর্যন্ত গাড়ি থেকে নামেন না। আমি মনে করি এটি একজন ব্যক্তির জন্য এক ধরণের অপমান। এমনকি আমি আমাদের অনেক বিদেশি বন্ধুর মধ্যে এমন ধরনের আচরণ দেখেছি। তাঁরা চান, তাঁদের জন্য সবসময়ই একটি গাড়ি এবং ড্রাইভার তৈরি রাখতে হবে। একজনের জন্য এমন সুবিধা আমি দিতে চাইনি বলে আমাদের সেই বিদেশি বন্ধু আমার নামে নালিশ পর্যন্ত করেছেন। অন্য এক বিদেশির জন্য যখন আমরা একটি ছোট গাড়ির ব্যবস্থা করেছি, তিনি সেটা পরিবর্তন করতে বললেন, একটা বড় গাড়ি চাইলেন।
যখন আমি রংপুরে একটি প্রতিষ্ঠানে ট্রেনিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ শুরু করলাম, , প্রথম দিনেই একটা ল্যান্ড রোভার আমার বাড়ির গেটে আমাকে নিতে এলো আমাকে অফিসে নিয়ে যেতে। সেই প্রথম দিনেই আমি পরিবহন পুলকে এরকম গাড়ি না পাঠানোর অনুরোধ করেছিলাম।
আমাদের এনজিও সেক্টরে আসবাবপত্র এবং সাজসজ্জার ক্ষেত্রেও বেশ ভিন্নতা দেখি। কিছু প্রধান নির্বাহীর রুম বিশাল আকারের, সেখানে বিলাসবহুল চেয়ার-টেবিল। কোস্টে আমাদের সমস্ত অফিসে চেয়ার এবং টেবিলের নকশা একই ধরনের, আমরা সব টেবিল দেওয়ালের দিকে ঘুরিয়ে রাখি, যাতে আমরা নিজেদের জন্য একটা বড় জায়গা খুঁজে নিতে পারি এবং এর মাধ্যমে অফিসে অহেতুক আড্ডাকে নিরুৎসাহিত করি।
আমাদের মূল্যবোধসম্পন্ন একটি গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলতে হবে। এর মধ্যে একটি মূল্যবোধ হলো- সকলের সমতা ও সাম্য। আমাদের বেতন, পদ এবং ক্ষমতার পার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু সামাজিক স্তরের বিবেচনায়, সম্মানের ক্ষেত্রে আমরা সবাই সমান, মানুষকে ক্ষমতায়িত করার এটি একটি কার্যকর পদ্ধতি।
বগুড়ার মেয়েদের আমি সাধুবাদ জানাই। সাবাশ, তোমরা আমাদের পথ দেখিয়েছ। আমরা সত্যিই সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে চাই।
রেজাউল করিম চৌধুরী, ২৫ মার্চ ২০২৩

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা