বিশেষ প্রতিনিধিঃ
জেন্ডার বৈষম্য যেন আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে। জেন্ডার হলো নারী পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান সামাজিক বৈশিষ্ট্য। যেটি সমাজভেদে পরিবর্তনশীল।মোটকথা,পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ এবং রাষ্ট্রের জাতীয় উন্নয়নে নারী পুরুষের বৈষম্যহীনহীন অবস্থাই হচ্ছে জেন্ডার।
এ জেন্ডার বৈষম্যের পিছনে কিছু কারন রয়েছে।তার মধ্যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, অঅর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর সীমিত অংশগ্রহণ, নারীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। Sustainable Development Goals (SDG) এর ১৭ টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৫ম তম লক্ষ্যমাত্রা হল Gender Equity বা লিঙ্গ সমতা। অর্থাৎ লিঙ্গ সমতা অর্জন এবং সকল নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন। সমতা বলতে নারী পুরুষের জন্য সমান অধিকার,দায় দায়িত্ব ও সুযোগ সুবিধা বুঝানো হয়েছে। এবং সেটি অবশ্যই সকলের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী হতে হবে।
উন্নত রাষ্ট্র গড়তে হলে জেন্ডার সমতা একান্ত প্রয়োজন। এটি দেশের অর্থনৈতিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে দারিদ্র্যতা কমায়।অথচ জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠায় বাধা-বিপত্তির অভাব নেই।নারীকে দেশের সম্পদ নয় বরং বোঝা হিসেবে গন্য করা হয়।তাদেরকে দুর্বল ভাবা হয়।সামাজিক নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে নারীর চলাফেরা, লেখাপড়া সীমিত করে ফেলা হয়।মুষ্টিমেয় দু একজন নারীর দোষ ত্রুটি কে উদাহরন হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। কিছু নারী অধিকার সচেতন নারী এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হলেও নানাভাবে তাকে হেয় করা হয়।যার পরিপ্রেক্ষিতে সমতার আন্দোলন আড়ালেই রয়ে যায়। আর থাকবেনা ই বা কেন? যেখানে জন্মের পরপর ই শুরু হয় বৈষম্য।
একটি ছেলের জন্ম কে আনন্দের সাথে স্বাগত জানানো হয়।অপরদিকে মেয়ের জন্মকে অভিশাপ হিসেবে মনে করা হয়। শৈশবেই মেয়ের হাতে খেলনা হিসেবে তুলে দেয়া হয় পুতুল আর হাড়ি পাতিল যার মাধ্যমে খেলার ছলে পরবর্তী জীবনে সে তার নির্দিষ্ট ভূমিকা পালনের উপযোগী হয়ে গড়ে ওঠে।পক্ষান্তরে, ছেলেকে দেয়া হয় গাড়ী, পিস্তল,বন্দুক,বল ইত্যাদি যা তাকে উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন, কর্মঠ ও শক্তিশালী হতে শেখায়।খাদ্য বন্টনের ক্ষেত্রে ছেলের জন্য পুষ্টিকর খাবার আর মেয়ের জন্য না হলেও চলে। এখন যদিও এসব চিন্তাধারার কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।কিন্তু দেশের সাধারন জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার দিকে তাকালে দেখা যায় সে তুলনায় এই পরিবর্তন খুবই নগন্য। তবে এ সমস্যার সমাধান রয়েছে আমাদের হাতেই।আমরা যার যার অবস্থান থেকে জেন্ডার সমতা আনয়নে ভূমিকা রাখতে পারি।
একজন শিক্ষক হিসেবে এক্ষেত্রে আমাদের অনেক কিছু করার সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বিষয় আমরা কাজ করতে পারি। যেমন – ছেলে মেয়ে উভয় শিক্ষার্থীকে সমান দৃষ্টিতে দেখা উচিত। দলনেতা নির্বাচনে ছেলে ও মেয়েকে সমানভাবে দায়িত্ব দিতে হবে যাতে তারা সকলে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারে। জেন্ডার নিরপেক্ষ ভাষা – ছাত্র ছাত্রী র পরিবর্তে শিক্ষার্থী, শিক্ষক শিক্ষিকার পরিবর্তে শুধু শিক্ষক,সভাপতি ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত।মূলকথা,নারী পুরুষের সমান অধিকারের বিষয় টা যাতে তারা উপলব্ধি করতে পারে তা নিশ্চিত করা একান্ত জরুরী।
একটি ছেলে যদি নিজে ভালো খাবার, ভালো পোশাক পরিধানে অভ্যস্তএবং ভালো শিক্ষায় শিক্ষিত হয় অথচ তার সামনে তার ই নিজের বোনটি এই সমস্ত সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়, আর সেই অনুভূতিবোধটুকু যদি তার মধ্যে না ই জাগে তাহলে এ শিক্ষার কি কোন মূল্য আছে! সুতরাং জেন্ডার সাম্য আচরন সমাজের উন্নয়নে,জাতির অগ্রগতিতে অপরিহার্য। সমাজে বিদ্যমান জেন্ডার বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।
Lecturer in English, Choyta Nesaria Fazil Madrasah,Mirzagonj,Patuakhali.,
ICT4E District Ambassador,Patuakhali Sadar.