জেএম.মমিনঃ
ভোলার বোরহানউদ্দিনে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে ইতিহাস-ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন হায়দার আলী জমিদার বাড়ি যা হায়দার মহল নামে নাম করণ করা হয়েছে। বাংলা ১১৫৫ সালে তৎকালীন জমিদার হায়দার আলি বাড়িটি নির্মাণ করেন ৷ এবং তার নামানুসারেই জমিদার বাড়ির নামকরণ করা হয় হায়দার মহল। এটি বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের পেট মানিকা গ্রামে অবস্থিত ৷ ২৭৪ বছর পূর্বে নির্মিত তিনতলা বিশিষ্ট এই বাড়িটি ১৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত যা এখনো জমিদারী ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে আছে। জানাযায়, বাংলা ১১৫৫ সালে জমিদার হায়দার আলী তার জমিদারী শুরু করেন এবং পরবর্তী প্রজন্ম ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত জমিদারী প্রথা ধরে রাখেন। হায়দার আলীর ৫ম স্তরের বংশধর স্বপন মিয়া জানান, জমিদার হায়দার আলীর ৬ ছেলে ছিল ৷ যারা হলেন, আসমত আলী মিয়া, হেদায়েত আলী, এহসান আলী, এমদাত আলী, ইয়াকুব আলী ও লুতফে আলী। ২০ বছর জমিদারী পেশায় থাকাকালীন সময়ে ৪২ বছর বয়সে হায়দার আলী মারা যান। পরবর্তীতে তার দুই পুত্র এমদাদ আলী ও লুতফে আলী ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত জমিদারী প্রথা ধরে রাখেন। তার অন্য ছেলেদের মধ্যে ইয়াকুব আলী বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে খেলাফত ও কংগ্রেস কর্মী হিসেবে বড় ভূমিকা পালন করেন । জমিদার হায়দার আলী চার হাজার একর সম্পত্তির মালিক ছিলেন ৷ ১১৫৫ বঙ্গাব্দে হায়দার মহলের মূল ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এই হায়দার মহলের মূল ভবন ছাড়াও পেছনের দিকে একতলা আরো চারটি ভবন রয়েছে। এ ভবনগুলো তৈরিতে বালু ও সিমেন্টের পরিবর্তে ব্যয়বহুল চুনা ও সুরকি ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিটি দেয়াল দেড় হাত পুরু। বিল্ডিং নির্মাণের সময় ভিম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নতমানের শাল কাঠ- যা তিন-চারশ বছর পর এখনো অক্ষত। বাড়িটির আয়তন সর্বমোট ১৪ একর ২২ শতাংশ। সংস্কারের অভাবে বর্তমানে বাড়িটি জরাজীর্ণ হলেও এখনো দৃষ্টিনন্দন।
নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাড়ির চারদিকে ছিল ঘের কাটা ৷ বাড়িটির পশ্চিম পাশে একটি বিশাল আকৃতির দীঘি রয়েছে। সে সময় এ বাড়ির জমিদাররা শখ করে হরিণ, ময়ূরসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় প্রাণী পুষতেন। কালের সাক্ষী হিসেবে আজো ওই হায়দার মহলে বিশাল আকৃতির হরিণের শিং, ময়ূরের পালক, বাঘের চমড়াসহ নানা রকম ঐতিহ্য সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও কিছু কিছু ঐতিহ্য জাতীয় জাদুঘরে শোভা পেয়েছে। তৃতীয় তলায় দেখা যায়, কয়েকশ বছরের প্রাচীন এ ভবনের প্রতিটি দেয়াল পুরনো কিন্তু আজো অক্ষত। শুধু কয়েক স্থানে শ্যাওলা জমে আগাছার সৃষ্টি হয়েছে। হায়দার মহলের সামনের দিকে দক্ষিণ পাশে রয়েছে ফুলের বাগান, দরজায় রয়েছে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, সুপ্রাচীন প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাইক্লোন শেল্টার, ঈদগাহ মাঠ যা তাদের পরবর্তী বংশধররা নির্মাণ করেন ৷ বর্তমানে এই বাড়িটি এমদাত আলী ও আসমত আলীর নাতিদের দায়িত্বে থাকলেও মূল ভবনে কেউ বসবাস করেন না। তবে বাড়ি ভিতরে নতুন ঘর নির্মান করে বসবাস করছে হায়দার আলীর বংশধররা ৷
এদিকে এই হায়দার মহলে ৩০ বছর ধরে কেউ থাকে না। তাই সংরক্ষণের অভাবে অযত্নে-অবহেলায় পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন। তারপরেও প্রচীনতম দৃষ্টিনন্দন এই বাড়িটি দেখতে ছুটে আসেন অনেক দর্শনার্থী। প্রচীন ঐতিহ্যকে ধরে রাখার দাবি স্থানীয়দের। হায়দার আলীর বংশধর ও বর্তমান কুতুবা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জোবায়েদ মিয়া জানান, বাড়িটি রক্ষনাবেক্ষন সহ অন্যান্য খরচ পরিচালনার জন্য এজমালি একটি ফান্ড রয়েছে ৷ তা থেকে বিভিন্ন খরচের ব্যয় বহন করা হয় ৷ এবং উন্নয়ন মূলক কাজ করা হয় ৷ তিনি আরো জানান, নিজেদের উদ্যোগে আমরা আমাদের এই বাড়িটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করে রাখবো ৷ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুর রহমান জানান, প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই বাড়িটি সংরক্ষনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে ৷