ডাঃ অরুন সিনহাঃ ডিভিএম,সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,বাংলাদেশ।
১৯২৯ সালে আফ্রিকার ‘জাম্বিয়া’ প্রথম অফিসিয়ালি শনাক্ত হওয়া এই রোগ ১৯৪৩ সাল থেকে ৪৫ সালের মধ্যে মহাদেশের বিস্তীর্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। গরুর গায়ে প্রথমে পক্সের মতো বের হয়ে ছড়িয়ে পড়ে পুরো গায়। এই রোগে গরু মরে না। তবে রোগটি হয়ে ফোড়া ফেটে যাওয়ার পর ঘন ঘন ড্রেসিং না করলে এবং পশুর যত্ন না নিলে গরু মারা যায়। গরুর লাম্পি রোগ আসলে গরুর স্কীন রোগ বা চর্ম রোগ।
লাম্পি রোগ কিঃ
এটি ভাইরাস দ্বারা সুষ্ট একটি চর্মরোগ যা শুধুমাত্র গরু ও মহিষে হয়। বাংলাদেশের গবাদি প্রাণিতে ২০১৯ সালে প্রথম দেখা যায় যা বর্তমানে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এটি জুনটিক রোগ নয়। রোগ হওয়ার সময়ঃ শীতের শেষে এবং বর্ষার শুরুতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়।
লাম্পি রোগ ছড়ানোর উপায়ঃ
মশা ও মাছি, উকুন ও আঠালী, মাইটের মাধ্যমে, আক্রান্ত প্রাণীর স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে, আক্রান্ত প্রাণীর লালা, দুধ এবং সংস্পর্শ মাধ্যমে, প্রাণীর পরিচর্যাকারী, টিকা প্রদান ও চিকিৎসা এবং যন্ত্রপাতির মাধ্যমেও এ রোগটি ছড়ায়।
লাম্পি রোগের লক্ষন সমূহঃ
১) প্রথম পর্যায়ে আক্রান্ত প্রাণীর জ্বর, ব্যথা ও খাবার গ্রহণে অরুচি দেখা যায়।
২) আক্রান্ত প্রাণীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গোলাকার গুটি বা ফোস্কা দেখা যায়।
৩) পায়ে এবং শরীরের নিম্নাংশে ফুলে পানি জমা হয়।
৪) শেষের দিকে গুটি বা ফোস্কা ফেটে যায় যার ফলে ক্ষত বা ঘা সৃষ্টি হয়।
লাম্পি রোগের ক্ষতিকর দিকসমূহঃ
১) গাভীর দুধ উৎপাদন হ্রাস পায়, বন্ধ্যাত্ব এবং গর্ভপাত হয়।
২) রোগে আক্রান্ত প্রাণীর চামড়ার মান খারাপ হওয়ার কারণে খামারীর আর্থক ক্ষতি হয়।
৩) ওজন অনেকাংশে কমে যায়।
৪) ১০-১৫% মৃত্যূর হার পাওয়া যায়।
লাম্পি রোগ প্রতিরোধে করণীয়ঃ
১) খামারের জীব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
২) আক্রান্ত প্রাণীকে সুস্থ প্রাণী হতে অতিদ্রুত পৃথকস্থানে সরিয়ে রাখা।
৩) নিয়মিত টিকা প্রদান নিশ্চিত করা।
লাম্পি রোগের টিকা প্রদানের নিয়মাবলীঃ
গবাদিপ্রাণিকে ৪-৬মাস বয়স থেকে এলএসডি টিকা প্রদান শুরু করতে হবে এবং বছরে একবার বুস্টার ডোজ প্রদান করতে হবে। এলএসডি টিকা প্রতি প্রাণিকে ২মিলি করে ঘাড়ের চামড়ার নিচে প্রয়োগ করতে হবে। টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে অবশ্যই কুলচেইন মানতে হবে।
লাম্পি রোগ প্রতিকারের করণীয়ঃ
১) অভিজ্ঞ প্রাণি চিকেৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
২) অনেকক্ষেত্রে পেনিসিলিন ও এন্টিহিস্টাসিন জাতীয় ওষূধ দিয়ে চিকিৎসা করলে সুফল পাওয়া যায় এবং ব্যথানাশক ব্যবহার করতে হবে। আক্রান্ত স্থান মশামাছি বসা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।