পটুয়াখালীর বাউফলে সহকারী শিক্ষিকার সাথে প্রধান শিক্ষকের আপত্তিকর ফোনালাপ ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে এলাকাবাসী। তবুও ও বহাল তবিয়তে এখনো রয়েছেন তারা। এমন ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ছোট ডালিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।
অত্র প্রতিষ্ঠান এলাকা সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালীর বাউফলে নাজিরপুর ছোট ডালিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুব আলম এর সাথে চাকরী রিজাইন দেওয়ার সাড়ে তিন বছর পর অবৈধভাবে যোগদান করা অত্র প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষিকা মাসুমা বেগমের সাথে একটি আপত্তিকর অডিও কল রেকর্ড ফাঁস হয়। এ অডিও ফুটেজে সহকারী শিক্ষিকা মাসুমা বেগমের সাথে প্রধান শিক্ষক মাহবুব আলমের পরকিয়া প্রেম আছে বলে স্থানীয়দের মধ্যে গুঞ্জন চলছে। এ ঘটনা এখন এলাকার আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে।
সূত্র আরো জানা যায়, পটুয়াখালীর বাউফলে নাজিরপুর ছোট ডালিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোসা: মাসুমা বেগম প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকে প্রায়ই মাসের পর মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকে । তবুও বেতন ভাতা উত্তোলন করার সুযোগ দিতেন প্রধান শিক্ষক মাহবুব আলম। সর্বশেষ ১১ মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে বেতন ভাতা উত্তোলন করে সরকারি অর্থ আত্মসাত এর পর ২০১৯ সালের ঐ ২৭ এপ্রিল চাকরি থেকে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। এরপর ম্যানেজিং কমিটি ৪ মে ২০১৯ তারিখে ৪/১৯ নং সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদত্যাগপত্র গৃহীত হয় এবং উক্ত পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশনসহ ঐ প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মাহবুব আলম বিধি মোতাবেক ওই শিক্ষিকা মাসুমা বেগমের এমপিও কপিতে নাম কর্তনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিজি) পাঠানো হয়। এরপর তার ব্যাংক একাউন্ট থেকে বেতন ভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়।
প্রায় সাড়ে তিন বছর পর ঐ শিক্ষিকা মাসুমা বেগমকে হঠাৎ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আবার (১৩ আগষ্ট ২০২২) অবৈধভাবে যোগদান করান প্রধান শিক্ষক মাহবুব আলম। এই খবর জানাজানি হলে স্থানীয় সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহের জন্য ঐ প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান মাহবুব আলম ও সহকারী শিক্ষিকা মাসুমা বেগমের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এর পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ প্রকাশিত হয় এবং উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানতে পারে। নিউজ প্রকাশের পরবর্তীতে তদন্ত হলে তাদের মধ্যে কারো চাকরী থাকবেনা। এই মর্মে তাদের মধ্যে বুদ্ধি পরামর্শ শুরু হয়। এক পর্যায়ে তারা অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অত্র প্রতিষ্ঠানের ২০২২ সালের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে তাদের মধ্যে আর সামনাসামনি কথা না হওয়ায় প্রধান শিক্ষক মাহবুব আলম সহকারী শিক্ষিকা মাসুমা বেগমের সাথে একটু মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। স্কুল চলাকালীন সময়েও তাদের দুজনকে একসাথে বারবার দোতলায় কানাকানি করতে দেখা যায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের চরিত্র যদি এমন হয় তাহলে প্রতিষ্ঠানের অবস্থা আর কি হবে। প্রধান শিক্ষক মাহাবুব আলম উপজেলার মদনপুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন নিজের ভাইয়ের স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে চাকরী হারান। মামলা নং জিআর-৮৯/২০০৯ ইং। সেখান থেকে ২০১১ সালের ৪ এপ্রিল দলীয় প্রভাব খাটিয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান মাহবুব আলম। এরপর থেকেই শুরু হয় তার দুর্নীতির বিভিন্ন কর্মকান্ড। ঐ প্রতিষ্ঠানের আয়া মিতু বেগম প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকে অনুপস্থিত থেকে তার শাশুড়িকে দিয়ে ডিউটি করিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও ওই সহকারী শিক্ষিকা মাসুমা বেগম চাকরী থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রায় সাড়ে তিন বছর পর অবৈধভাবে চাকুরীতে যোগদান করানো সহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষিকা মাসুমা বেগম বলেন, উনি আমার সাথে যেটা করেছেন, ওনার বিচার একদিন বসবে।
প্রধান শিক্ষক মাহবুব আলমকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সহকারী শিক্ষিকা মাসুমা বেগম আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। তার সাথে কথা বলতেই পারি, তবে যা শুনেছেন তা সত্য নয়।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।