1. admin@upokulbarta.news : admin :
বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১১:২৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বোরহানউদ্দিনে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে মানুষের ঢল ফকিরহাটে বিনামূল্যে ৫ দিনের জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং ক্যাম্প ফকিরহাটে মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সভা লালমোহনে নাগরিক সংবর্ধনায় এমপি শাওন: নৌকার বিজয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে বাগেরহাট-১ আসনে শেখ হেলাল উদ্দীনের মনোনয়নপত্র জমা দিলেন স্বপন দাশ বহুমুখী কল্যাণকর কাজে নিয়োজিত তরুণ সংগঠক জহিরুল ইসলাম কালীগঞ্জে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ সংক্রান্ত ডর্‌প এর ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত ফকিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত ফকিরহাটের পিলজঙ্গ ইউপির উন্মুক্ত ওয়ার্ড সভা অনুষ্ঠিত ফকিরহাটের নলধা মৌভোগ ইউপির উন্মুক্ত ওয়ার্ড সভা অনুষ্ঠিত

জনবান্ধব সহজ সরল মানুষের যে বড্ড প্রয়োজন এ সমাজে – মেহেরু সাঈদ

বিশেষ প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০২৩
  • ১৮৫ বার পঠিত

১৯৯১ ইং সালের ২৯ শে এপ্রিল । বিকেল থেকে আকাশ মেঘলা । গুড়িগুড়ি বৃষ্টি সহ হালকা বাতাস বয়ে যাচ্ছিলো বাড়িঘরের উপর দিয়ে । আমরা তখন আমার বড় ভাইয়ের সাথে নোয়াখালীর মাইজদিতে ছিলাম । আমার বড়ভাই সেসময় সারারাত রেডিও হাতে ঘরে ঘরে পায়চারি করেছে । এক মুহুর্তের জন্য ও দুচোখ এক করেনি । খুব সকালে আমাদের কে ঘুম থেকে তুলে ভাবীর হাতে সংসারের খরচ যা ছিল সব নিয়ে আমার ছোট ভাই জন্টু কে পাঠিয়ে দিলো কুতুবদিয়ার উদ্দেশ্যে । পরবর্তী ছয়মাস কি অক্লান্ত পরিশ্রম করে সংসারের খরচ বাঁচিয়ে বন্ধু / সহকর্মীদের কাছ থেকে ধার দেনা করে আমাদের পাড়াপ্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনদের জন্য যতটুকু পেরেছে চাল, ডাল , আলু ও ঔষধপত্রের ব্যবস্থা করে গেছেন । ইনিই আমাদের বড়ো ভাই রেজাউল করিম চৌধুরী ,আমার মা যাকে ছোট বেলায় বেশিরভাগ সময় গায়ের আঁচল দিয়ে ঢেকে রাখতেন মানুষের মুখ দোষ পড়বে বলে ।
আমাদের বাড়ির পাশে খালের উপর একটা ছোট্ট কালভার্ট ছিল । বর্ষায় অতিরিক্ত বৃষ্টিতে সেই কালভার্ট এর দু’পাশে পানি থৈ থৈ করতো । ভাইযা সেসময় পাড়ার বড়বড় ছেলেদের কে নিয়ে পুলের মধ্যে চাঁই বসিয়ে সারারাত জেগে থেকে মাছ ধরতেন । দিনের বেলায় সেই মাছ ঘরে ঘরে বিলানো হতো ।
শীতকালে লবণ মাঠ তৈরিতে আমার মায়ের Helping hand আবু তাহের বদ্দা , আজিজ বদ্দা , মাহাবুব বদ্দা এদের সাথে সমানতালে কাজ করতো । ধানের জমিনের প্রত্যেকটা আইলে আইলে হাঁটতেন । শীতকালে পানির অভাবে ধানের চাষ করতে পারতো না বলে ভাইয়া প্রথম আমাদের পুকুরের কোনায় শ্যালোমেসিন বসিয়ে আমাদের আশেপাশের সবার জমিতে পানি দিয়ে চাষের উপযোগী করিয়ে দেন । শুধু কি তাই ? শত শত মানুষের পিপাসা মেটানো হতো সেখান থেকে।
আমার ভাইয়া বাড়িতে সবসময় একটা First aid box রাখতেন । পাড়ার ছোট বড় যার যখন কিছু হয়েছে দৌড়ে আমাদের বাড়িতে চলে এসেছে । যে কোন ছোট খাটো অসুখ -বিসুখ , কাটা – ছেঁড়ার চিকিৎসা এখান থেকেই হতো । বাচ্চাদের কে ধরে ধরে কৃমির ঔষধ খাওয়াতেন । সব চেয়ে বেশী চিন্তা করতেন বাচ্চাদের স্বাস্থ্য নিয়ে । বলতো এরাই তো আমাদের ভবিষ্যৎ , এরা সুস্থতার সাথে বেড়ে না উঠলে আমাদের চলবে কিভাবে ?
বাহ্যিক কিছু করার কথা কখনো ই চিন্তা করতো না আমার ভাই । একটাই কথা আগে সবার পেটের ভাতের ব্যবস্থা হোক । উপকার করার মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠা নিরহংকারী , সহজ , সরল , সাদা ও নরম মনের এই মানুষ টা ই আমাদের বড়ভাই Rezaul Karim Chowdhury যার অতিরিক্ত নিয়মানুবর্তিতা এবং উচ্চমার্গীয় ব্যক্তিত্বের কারনে আমরা ভাইবোনরা বুড়া হয়ে যাওয়ার পরে ও ওনার সামনে দাঁড়িয়ে এখোনো মাথা সোজা করে কথা বলতে পারি না ।
আমি যে অক্ষরের মাধ্যমে এসব লিখছি এই অক্ষর জ্ঞানের হাতে খড়ি হয়েছিল আমার ওনার হাতেই । নিজের সন্তানের মতো করে আমাদের মানুষ করার চেষ্টা করেছেন । আমরা ঠিক মতো মানুষ হইনি , ওনার মানবিক কাজগুলো তে ওনার পাশে দাঁড়াতে পারিনি সেটা আমাদের ভাইবোনদের দূর্ভাগ্য ।
চাকরি জীবনে অনেক বড়ো ও বেশি বেতনের চাকরি করার সুযোগ পেলে ও সে সুযোগ কে পায়ে ঠেলে এমন এক কাজ বেছে নিয়েছেন যে কাজের মাধ্যমে উনি একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছেন এবং নিজের চাকরীর পাশাপাশি আরো অনেকের চাকরির সংস্থান করতে পেরেছেন । ওনার একটা ই কথা একলা নয় সবাইকে নিয়ে খেতে পারার মধ্যে ই সত্যিকারের আনন্দ ।
আল্লাহ সবসময়ই আমার ভাইয়ের সাথে ছিলেন , আছেন ইনশাআল্লাহ থাকবেন ও ।আল্লাহ ওনাকে দুহাতে ঢেলে দিয়েছেন । চার চারটা সোনার টুকরা উপহার দিয়েছেন । বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য এখনো পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছেন । আমাদের ভাইবোনদের দোয়া , আত্মীয় স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশীর দোয়া সর্বোপরি আমাদের বাবা মায়ের দোয়া ওনার সাথে সারাজীবন ছিল ইনশাআল্লাহ এখনো আছে । আশা করি আল্লাহ আমার ভাইকে আরো অনেক হায়াত দিবেন এবং সুস্থ্য হায়াত দিবেন। যাতে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত উনি ওনার মানবিক কাজগুলো চালিয়ে যেতে পারেন ।
আল্লাহ যেন ঘরে ঘরে এমন শত শত মানবিক মানুষের জন্ম দেন । কারন অসত, অসাধু , অর্থলোভী , ক্ষমতা লোভী মানুষের কাছ থেকে সাধারণ মানুষ কে বাঁচাতে এ ধরনের মানবিক, পরোপকারী ও জনবান্ধব সহজ সরল মানুষের যে বড্ড প্রয়োজন এ সমাজে ।

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা